মো.নয়ন ফয়েজী,জেলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার আলোচিত ভূয়া এমবিবিএস ডাক্তার, শিশু ধর্ষণকারী, হত্যা মামলার আসামি এবং ভোঁপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হামিদুল ইসলাম আবারও আলোচনায়। সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের অভিযানে প্রকাশ পেয়েছে— তিনি এখন নিজেকে “পল্লী চিকিৎসক” পরিচয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছেন এবং রোগীদের ইসিজি পর্যন্ত করছেন!
উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৩ অক্টোবর (মঙ্গলবার) ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে আলম সিদ্দিকী এবং পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে হামিদুলের ‘বানজু মেডিক্যাল স্টোর’ নামের অনুমোদনহীন চিকিৎসালয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খাইরুল আলম বলেন,
“অভিযানের সময় হামিদুল নিজেকে পল্লী চিকিৎসক দাবি করেন। কিন্তু একজন পল্লী চিকিৎসকের সীমাবদ্ধতা বা কোন ওষুধ তিনি দিতে পারেন— এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। বরং তর্কে জড়িয়ে পড়েন।”
তিনি আরও জানান,
“অভিযানে দেখা যায়, তিনি চেম্বার খুলে কয়েকটি বেডে রোগীদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। ম্যাজিস্ট্রেট স্যার সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে উনার (হামিদুল) বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন।”
স্থানীয় সাংবাদিক ও বিজয় টেলিভিশনের রিপোর্টার নয়ন ফয়েজী বলেন,
“উনি দীর্ঘদিন ধরে অপচিকিৎসা দিয়ে এলাকার মানুষকে ক্ষতির মুখে ফেলছেন। আগে নিজেকে এমবিবিএস ডাক্তার দাবি করে বিএমডিসির ভুয়া রেজিস্ট্রেশন (নং ৮৩৭২৫) ব্যবহার করতেন, যা পরবর্তীতে বিএমডিসি বাতিল করে তার বিরুদ্ধে মামলা করে। সেই মামলায় তিনি কারাভোগও করেন।”
নয়ন ফয়েজী আরও জানান,
“আমি ছদ্মবেশে রোগী সেজে গিয়ে বলি আমার বুকে ব্যথা। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ইসিজি করেন, যা একজন পল্লী চিকিৎসকের করার এখতিয়ার নেই। এছাড়া তিনি অ্যান্টিবায়োটিক ও ইনজেকশন প্রয়োগ করেন রোগীদের শরীরে, যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।”
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে বিএমডিসি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছিল— হামিদুল ইসলাম নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিতে বা চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না। কিন্তু সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে তিনি আবারও চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন প্রকাশ্যে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূমি কর্মকর্তা) মো. নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন,
“আমরা প্রাথমিকভাবে তার বহু অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
উল্লেখ্যভূ, য়া এমবিবিএস ডাক্তার থেকে কারাভোগ শেষে “পল্লী চিকিৎসক” পরিচয়ে নতুন করে চিকিৎসা ব্যবসা শুরু করেছেন হামিদুল ইসলাম। অনুমোদনহীনভাবে ইসিজি করা, ইনজেকশন প্রয়োগ ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের অভিযোগে আবারও আইনের আওতায় আসছেন তিনি।

0 comments: